কোন ইনভেস্ট ছাড়াই কিভাবে নিজের বিজনেস শুরু করবেন ? ৭টি প্রমানিত পদ্ধতি !
অনেকের ই স্বপ্ন থাকে নিজের একটা বিজনেস শুরু করার । কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট করার ভয়ে অনেকেই পিছিয়ে যায় । আচ্ছা, আমি যদি বলি যে, এক টাকা খরচ না করেও আপনি একটা সফল বিজনেস শুরু করতে পারেন ? আপনার নিজের দক্ষতা, ক্রিয়েটিভিটি এবং আপনার যা আছে, তাই নিয়েই আপনি আপনার নিজের একটা বিজনেস শুরু করতে পারেন । এই পোস্টে আমি শেয়ার করব সাতটা এফেক্টিভ স্ট্রাটেজি যার মধ্যেমে জিরো ইনভেস্টমেন্টে আপনার বিজনেস শুরু করতে পারবেন ।
পদ্ধতি ১ – আপনার দক্ষতা চিহ্নিত করুন –
জিরো ইনভেস্টমেন্টে বিজনেস শুরু করতে চাইলে প্রথম স্টেপ হচ্ছে আপনার দক্ষতা গুলো চিহ্নিত করতে হবে । আপনি কি একজন ট্যালেন্টেড রাইটার, গ্রাফিক ডিজাইন কি আপনি ভালো পারেন, আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়া ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারেন নাকি আপনি ওয়েব ডেভ্লপমেন্ট পারেন? একটা কাগজ নিন । তাতে লিখে ফেলুন আপনার নিজের স্কিল গুলো । আর, যদি আপনি এখনও কোন স্কিল নিতে না পারেন। অনলাইনে অসংখ্য ফ্রি অনলাইন কোর্স আছে, ইউটিউবে আছে ফ্রী টিউটরিয়াল । শিখে নিন আপনার পছন্দমত যে কোন স্কিল ।
একশন স্টেপ – আপনার লেখা আপনার নিজের ৩ থেকে ৫ টা স্কিলের তালিকা তৈরি করুন এবং সেই স্কিল গুলো থেকে কি কি সেবা অফার করতে পারেন, চিন্তা ভাবনা শুরু করুন ।
যখন আপনি আপনার স্কিলের তালিকা তৈরি করে ফেলবেন, ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফরমে আপনার প্রফাইল তৈরি করুন । যেমন, Upwork, Freelancer, Fiverr, Toptal ইত্যাদি । আপনার এক্সপার্টাইজ দেখান, আপনার আগে কি কি প্রজেক্ট করেছেন, তা দেখান এই সব ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্মে । আপনার যদি আগের পোর্টফলিও না থাকে আপনার সার্ভিস কম রেটে অফার করতে পারেন । কয়েকটা পোর্টফলিও হয়ে গেলে আপনার রেট বাড়িয়ে নিতে পারেন ।
পদ্ধতি ২ – ড্রপ সার্ভিসিং ।
আপনার যদি পারটিকুলার কোন দক্ষতা না থাকে, ড্রপ সার্ভিসিং হচ্ছে একটা এক্সেলেন্ট বিজনেস মডেল যা আপনি ট্রাই করতে পারেন । যে কোন সার্ভিস সেল করার জন্য আপনি একজন মিডিলম্যান হিসেবে থাকলেন । মনে করেন আপনার দেশী বা বিদেশী ক্লায়েন্ট আপনাকে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ১ লক্ষ টাকা দিলো । আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করলেন, ফ্রিল্যান্সার কে দিলেন ৫০ হাজার টাকা । আপনার পকেটে ঢুকল ৫০ হাজার ।
একশন স্টেপ – অনলাইনে রিসার্চ করুন । যেমন Fiverr, Upwork, Toptal, এমন কি Linkedin এ সার্চ দিন । এবং দেখুন অন্যন্য ফ্রিল্যান্সার রা কেমন রেট দিয়েছে যে কোন সার্ভিস এর জন্য । এরপর আপনার একটা সিম্পিল ওয়েবসাইট খুলুন আর ওয়েবসাইট খোলার টাকা না থাকলে, ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে একটা পেজ খুলুন এবং আপনার সার্ভিস গুলো অফার করুন। যাতে ফ্রিল্যান্সারকে দেয়ার পর ও আপনার লাভ থাকে ।
পদ্ধতি ৩ – কন্টেন্ট ক্রিয়েশন –
কন্টেন্ট তৈরি করেও আপনি কোন ইনভেস্ট ছাড়াই আপনার বিজনেস তৈরি করতে পারবেন । একটা ব্লগ তৈরি করুন blogger.com অথবা wordpress.com এ। অথবা একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলুন । অথবা একটা সোশাল মিডিয়া পেজ (ফেসবুক) তৈরি করুন এমন একটা টপিক্সের উপর যা আপনার ভালো লাগে । যখন আপনার অডিয়েন্স বাড়বে, আপনার কন্টেন্ট গুলো মনেটাইজ করতে পারবেন এডসেন্স, স্পন্সরশীপ, এফিলিয়েট মার্কেটিং, এমন কি আপনার ডিজিটাল প্রডাক্ট সেল করার মাধ্যমে আপনার আরনিং বাড়াতে পারবেন ।
একশন স্টেপ – আপনার অডিয়েন্স পছন্দ করে এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন । আপনার সোশাল মিডিয়া পেজ, যেমন ফেসবুক পেজে অথবা ফ্রি ব্লগিং পেজে শেয়ার করুন । অথবা ইউটিউব ভিডিও তৈরি করুন । সেই ভিডিও আপনার সকল প্লাটফরমে শেয়ার করুন ।
পদ্ধতি ৪ – ডিজিটাল প্রডাক্ট –
আপনি যদি অডিয়েন্স স্টাব্লিশড করে ফেলেন, আপনি তাদের কাছে ডিজিটাল প্রডাক্ট সেল করতে পারেন । সেটা হতে পারে ইবুক, অনলাইন কোর্স, প্রিন্টেবলস অথবা টেমপ্লেট । ডিজিটাল প্রডাক্ট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা তৈরি করতে কোন খরচ নাই । অনলাইনে অনেক ফ্রি টুল আছে যার মাধ্যমে আপনি ডিজিটাল প্রডাক্ট গুলো বানাতে পারবেন। GUMROAD অথবা TEACHABLE এর মত প্ল্যাটফর্ম দিয়ে আপনার ডিজিটাল প্রডাক্ট সেল করতে পারবেন ।
একশন স্টেপ – একটা টপিক্স সিলেক্ট করুন যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অডিয়েন্সরাও পছন্দ করে । এই টপিক্সের উপর ডিজিটাল প্রডাক্ট তৈরি করুন । তৈরি হয়ে গেলে আপনার ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল যা আপনি একদম ফ্রিতে তৈরি করেছেন সেটাতে পোস্ট করুন ও সেল করুন ।
পদ্ধতি ৫ – এফিলিয়েট মার্কেটিং –
এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে আরেকজনের প্রডাক্ট প্রমোট করা এবং সেল করে কমিশন নেয়া । প্রত্যেকটা প্রডাক্টের জন্য আপনাকে দেয়া হবে একটা রেফারেল লিঙ্ক । এই লিঙ্ক প্রমট বা শেয়ার করে সেল করলেই পাচ্ছেন কমিশন । যেমন, দারাজ, পিকাবু, বিক্রয়, ফুড পান্ডা, চালডাল, টেন মিনিট স্কুল এবং শিখো । এদের এফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করে বা সেল করে ইনকাম করতে পারেন সেলস কমিশন । এছাড়াও, রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এফিলিয়েট প্রোগ্রাম এমাজন এসসিয়েট অথবা শেয়ার এ সেল ইত্যাদি ।
একশন স্টেপ – এফিলিয়েট প্রোগ্রামে সাইনাপ করুন আপনার পছন্দের টপিক্সের উপর । আর আপনার কন্টেন্টে এইসব এফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করুন । আপনার ফেসবুক পেজে শেয়ার করুন আর ইনকাম করুন সেলস কমিশন ।
পদ্ধতি ৬ – অফার কন্সাল্টিং সার্ভিস –
আপনার যদি কোন বিষয়ে এক্সপার্টাইজ থাকে, যেমন আপনি হয়ত খুব ভালো মার্কেটিং পারেন, অথবা সফটওয়্যার ডেভ্লপমেন্ট পারেন অথবা আপনি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট । আপনি কন্সাল্টিং বিজনেস স্টার্ট করতে পারেন । আপনি ফ্রি টুল জুম অথবা গুগল মিটের মাধ্যেমে ওয়ান টু ওয়ান কন্সাল্টিং সারভিস প্রদান করতে পারেন । এখানে আপনার ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে আপনার নলেজ এবং এক্সপেরিয়েন্স ।
একশন স্টেপ – একটা সিম্পিল ওয়েবসাইট অথবা লিঙ্কডিন প্রফাইল তৈরি করুন এবং আপনার এক্সপার্টাইজ হাইলাইট করুন এবং শো করুন কিভাবে আপনি আপনার ক্লায়েন্টকে সাহায্য করতে পারেন ।
পদ্ধতি ৭ – পারসোনাল ব্র্যান্ড –
সাফল্যে জন্য আপনার একটা পারসোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন । আপনি যে বিজনেস ই করুন না । যখন মানুষ আপনাকে জানবে, পছন্দ করবে অথবা বিশ্বাস করবে, তারা তখন আপনার সাথে বিজনেস করতে চাইবে । ফেসবুক, ব্লগে অথবা ইউটিউবে ভাল্যুয়েবল কন্টেন্ট শেয়ার করুন । আপনার অডিয়েন্সের সাথে এঙ্গেজড থাকুন, এবং আপনাকে আপনার টপিক্সে একজন এক্সপার্ট হিসেবে প্রকাশ করুন ।
একশন স্টেপ – ধারাবাহিক ভাবে আপনার প্লাটফরমে ভ্যালুয়েবল কন্টেন্ট শেয়ার করুন, আপনার অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারেক্ট করুন এবং আপনার ইন্ডাস্ট্রির অন্যন্যদের সাথে নেটওয়ার্ক স্টাবলিশ করুন ।
সিদ্ধান্ত –
জিরো ইনভেস্টমেন্টে ব্যাবস্যা শুরু করা শুধু সম্ভব না, এটা অবিশ্যাস্যভাবে সম্মানজনক । আপনার দক্ষতা, ক্রিয়েটিভিটি এবং আপনার যা আছে তা নিয়েই আপনি আপনার বিজনেস শুরু করতে পারেন । তাই আরেকটু ডিপ ড্রাইভ দিন, এই পদ্ধতি গুলো এক্সপ্লোর করুন এবং আপনার উদ্দক্তার জার্নি শুরু করুন । আজই ।
কিভাবে বিজনেস স্টার্ট করতে হয় জানতে ইন্টারেস্টেড হলে অথবা আমাদের কমিনিউটির অংশ হতে চাইলে আমাদের Facebook Group এ জয়েন করতে পারেন । এখানে আপনি পেয়ে যেতে পারেন ট্রিক এন্ড টিপস এবং সাপোর্ট ।